
২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারী থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট পর্যন্ত ১৫ বছর ৭ মাস বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ মুজিবের স্বপ্ন-দর্শনের নামে দেশকে পরিনত করা হয় ত্রাসের রাজত্বে। এই সাড়ে পনের বছর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশে পরিচালিত অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন বিশ্বের যে কোনো বর্বরোচিত কর্মকান্ডকে হার মানিয়েছে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। এই সময়ে শেখ মুজিবের স্বপ্ন আদর্শের নামে শুধু বিরোধী দল-মতকে নির্মূলে নির্মমতার পরিচয়ই দেয় নি- অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি, শিল্প খাতসহ সর্বস্তরকে বিপর্যস্ত করে একটি তলা বিহীন ঝুড়িতে পরিণত করে বাংলাদেশকে।
হাসিনার শাসনামলে তথ্য-প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য ও বিদ্যুৎ খাতকে করা হয়েছে ইন্ডিয়ার অভয়ারন্য। ব্যাংকগুলোতে লুটপাট করে অর্থনীতিকে করা হয়েছে ধ্বংস। কয়েকটি গ্রুপের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে দেশের পুরো ব্যাংকখাত। গুটি কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপ এখাত থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা পাচার করে বিদেশে গড়েছে সম্পদের পাহাড়।
শিক্ষা খাতে চালানো হয় নৈরাজ্য ও বিকৃত করা হয় ইতিহাস-ঐতিহ্য, বিদ্যুত খাতকে করা হয়েছে মেরুদন্ডহীন, এছাড়া প্রতিটি স্তরে স্তরে সুযোগ করে দেয়া হয়েছে ভারতীয় আগ্রাসনের। স্বাস্থ্য খাতেকে করা হয়েছে আস্থা ও অস্তিত্বহীন। এই সুযোগে বাংলাদেশের চিকিৎসা বাজার দখল করে ভারত। বাংলাদেশী রোগীদের ভীর সামাল দিতে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তৈরী হয়েছে বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক মানের হাসপাতাল।
সারা দেশে কায়েম করা হয় আওয়ামী রাজত্ব। প্রতিটি সরকারী বেসরকারি অফিসে মুজিব কর্নার প্রতিষ্ঠা করে অপচয় করা হয়েছে সরকারী বিপুল অংকের অর্থ। হাসিনা-মুজিব বন্ধনায় পেশাজীবি সংঘঠনের নেতা কর্মীরা মুখরিত ছিলো মজিব কর্নারগুলোয়। এ সকল কর্মকর্তারা দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে বিদেশে।ইন্ডিয়া, দুবাই, আইল অব ম্যান, হাইতি, পিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, কাতার, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বহুদেশে এরা টাকার পাচার করে সেকেন্ড হোম তৈরী করে রেখেছে। হাসিনার শাসনের সাড়ে পনেরো বছরে প্রশাসনের সর্বস্তরে বসিয়ে দেয়া দলীয় ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে কথা বলার সাহস পায় নি দেশের মানুষ।
হাসিনার পতনের ছয় মাস পার হলেও প্রশাসনের সর্বস্তরে হাসিনার বসিয়ে দেয়া এই ক্যাডার বাহিনী থেকে মুক্ত হতে পারেনি দেশের প্রশাসন ব্যবস্থা। গত সাড়ে পনের বছরে বাস্তবায়িত সকল উন্নয়ন প্রকল্প মুজিববাদী ঠিকাদারদের সাথে মিলেমিশে এ সকল দলীয় ক্যাডাররা লুটেপুটে খেয়ে হয়েছে আংগুল ফুলে কলাগাছ। তবে দুই চারজন সৎ কর্মকর্তা ছিলেন না এমন নয়। তাদের সংখ্যা ছিলো হাতে গোনা সংখ্যক।
এছাড়া বিরোধী মত বিবেচিত কর্মকর্তাদের হয় করে রাখা হয়েছে ওএসডি অথবা চাকুরীচ্যুত। ৫ আগষ্টের পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর অনেকে রাতারাতি বনে গিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী হিসেবে। এ সকল কর্মকর্তা হাসিনার সরকারের আমলে অবৈধভাবে বিপুল অংকের উপার্জন করে বর্তমান সরকারের আমলে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়িত হতে বিপুল অংকের টাকা খরচ করছে এবং সফলও হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। সম্প্রতি এলজিইডি প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগেও মোটা অংকের লেন-দেনের ঘটনা ঘটেছে বলে বিভিন্ন মহলে আলোচনা রয়েছে।
হাসিনার ক্ষমতামলে গুরুত্বপূর্ন পদে থাকা নিয়মিত প্রমোশন পাওয়া কর্মকর্তারা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে এখনো প্রশাসনের বড় বড় পদগুলো দখলে নিতে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। অর্থ মন্ত্রনালয়ের বিভাগ সমূহে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের বিভাগ ও দপ্তর সমূহে, বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয়ের অধিনস্থ্য ডিপিডিসি, ডেসকো, ডেসাসহ দপ্তর ও প্রকল্প সমূহের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে হাসিনা-বিপুর একান্ত বিশ্বস্ত কর্মকর্তারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দপ্তর সমূহসহ শিক্ষা বোর্ডগুলোতে দিপুমনি ও ইসকন নওফেলের বসানো গুরুত্বপূর্ন সব পদের কর্মকর্তারা এখনো বহাল রয়েছে বলেও জানা যায়। কৃষি মন্ত্রনালয়সহ অধীনস্থ অধিদপ্তরের, পরিদপ্তর সমূহে, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের দপ্তর, অধিদপ্তরের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বহাল থেকে নিজ দলীয় সতীর্থদের সংঘঠিত করে বিপ্লবোত্তর সরকারকে ব্যর্থ করে দেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে বলে জানা যায়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মুজিববাদী বিভিন্ন পেশাজীবি সংঘঠন সমূহের নেতা কর্মী যারা এতদিন বিশেষ সুবিধা ভোগ করে দেশে বিদেশে পাহাড়সম অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছে বিপ্লবোত্তর সরকার দীর্ঘায়িত হলে তাদের হালে পানি লেগে যেতে পারে বলে মনে করছে। পদ পদবী হাতিয়ে নিতে পারলেও একটি অজানা আশঙ্কা তাদের থেকেই যাচ্ছে। এ কারনে বিপ্লবোত্তর সরকার যাতে দীর্ঘায়িত হতে না পারে এ মিশন নিয়েই তারা কাজ করে যাচ্ছে। এ মিশন বাস্তবায়ন করতে তারা কয়েক ধাপে পরিকল্পনা মাফিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও1জানা যায়।
কয়েক পর্বের ধারাবাহিক বিশেষ অনুসন্ধানে তুলে ধরা হবে আওয়ামী পেশাজীবি সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পেশাজীবি পরিষদসহ বিভিন্ন নামে গঠন করা সুবিধাবাদী সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ কারা, কোথায় গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছে। পর্যায়ক্রমে চেষ্টা করা হবে গুরুতরপূর্ন পদ সমূহ দখল করতে কে কত টাকা খরচ করেছে। বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরার চেষ্টাও করা হবে কারা এদেরকে গুরুত্বপুর্ন পদগুলোতে পদায়ন হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।