প্রকাশিত : বৃহঃস্পতিবার , ৩০ জানুয়ারী ২০২৫ , দুপুর ১২:৫৯।। প্রিন্ট এর তারিখঃ শনিবার , ১৬ আগস্ট ২০২৫ , সন্ধ্যা ০৬:২০
রিপোর্টার : অনলাইন ডেস্ক:

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে পানি সেচের সেঁউতি


রিপোর্টার : the investor

আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে প্রায় সবখানে। বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রার মান পাল্টেগেছে। মাটির বাড়ির স্থলে উঠেছে ইটের ঘর। কুঁড়েঘরের স্থান নিয়েছে দালান। মানুষের জীবন যাত্রাকে আরও সহজ করতে তৈরি করা হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি, ব্যবহার হচ্ছে নানা রকম সব প্রযুক্তি। এসব আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রামবাংলার ঐতিহ্য পানি সেচের সেঁউতি। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল।

আদি কালে সিরাজগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষি ক্ষেত্রে এক সময় ডোবা-নালা, খাল-বিলের পানি সেচের কাজে ব্যবহার করা হতো স্যাওত। যা তৈরি করা হতো বালতি মতোই টিন দিয়ে। দুই ধারে দড়ি লাগিয়ে দুইজনে টেনে টেনে পানি সেচের ব্যবস্থা করত। অপরদিকে ছোট ডিঙ্গি নৌকার মতোই কাঠের তৈরি যা ক্ষেতের পাশে থাকে যার উপরে রাখা হতো বালির বস্তা বা ভারি ছোট গাছের গুল। অপর দিকে খাল বিলে বাঁশের মাচায় দাড়িয়ে পায়ের চাপে সেচের ব্যবস্থা করা হতো।  যা এই এলাকায় ঢেঁকি সেঁউতি নামে পরিচিত। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতির কারণে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার পুরাতন বা অতি পরিচিত সেঁউতি।

এক সময় এই সেঁউতির ব্যবহার ছিল ধনী গরিব প্রতিটি কৃষকের ঘরে ঘরে। এখন আর চোখে পড়ে না তেমন ছোট ছোট ডোবা-নালা। কৃষকের জমির এক কানিতে দেখা যায় না মাছ ধরার গর্ত। যা এখন মাটি ভরাট করে চলছে কৃষি কাজ। আগের মতো হয় না বন্যা। জমিতে থাকে না পানি। কৃষক হয়ে পড়ছে যন্ত্রনির্ভর। বলা চলে ইঞ্জিনচালিত মেশিন স্টার্ট দিলে অথবা বিদ্যুৎচালিত মটরের সুইচ অন করলেই উঠছে পানি। তারপরেও মাঝে মধ্যে দেখা মেলে কৃষিকাজে ব্যবহার যোগ্য স্যাওতের।

রায়গঞ্জ উপজেলার গ্রামপাঙ্গাসী কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হলে তারা জানান, একদিকে অধিক খরচ লাঘবে নিজেরা শ্রমের বিনিময়ে ছোট ছোট জমিগুলোতে সেঁউতি দিয়ে পানি দিলেও বড় বড় ক্ষেতের বেলায় বাপ-দাদার রেখে যাওয়া পুরাতন ঐতিহ্য সেঁউতি আজ অচল।

সিরাজগঞ্জ সদর থানার চররায়পুর গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন জানায়, বড় বড় প্রজেক্ট নয়- আজও নিজেদের বাড়ির আশেপাশে ছোট ছোট জমিগুলোতে আমরা পানি সেচের জন্য মটর বা শ্যালো মেশিনে খরচ বাঁচানো, নানা প্রতিকূলতার কারণে পানি দেয়ার জন্য সেঁউতি ব্যবহার করে থাকি।

খিচুরিপাড়ার কৃষক সাহেদ আলী জানায়, খালের ধারে জমি থাকায় এবং তা প্রজেক্টের আওতায় না আসায় বাধ্য হয়েই বাপ-দাদার আমলের সেঁউতি আজও ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদন করে থাকি।

নিজেদের বীজতলা তৈরি এবং কৃষি উৎপাদন কাজে পানি সেচের জন্য এক সময় বিভিন্ন খাল বিলে দেখা যেতো সেঁউতি লাগিয়ে পানি নিত কৃষকেরা। সেদিনের সেই সেঁউতির ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু বর্তমানে সেচের কাজটি মটর বা শ্যালো মেশিন দিয়ে ব্যবহার করার ফলে কৃষকের সেঁউতি প্রায় বিলুপ্তির পথে বলে জানান এলাকার সচেতন মহল।