
খুলনার বাজারে ক্রেতাদের জন্য বর্তমানে সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মাছের দাম। শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজির দামে স্বস্তি এলেও মাছের দাম বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় সব ধরনের মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে সরবরাহের ঘাটতি ও চলমান বৃষ্টিপাত।
নগরীর শিরোমনি বাজার, গল্লামারি বাজার, মিস্ত্রিপাড়া বাজার, নতুন বাজার, জোড়াকল বাজার, নিউ মার্কেট ও খালিশপুর বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে, কই মাছ ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, টেংরা ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা এবং চিংড়ি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি। পারশে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, ছোট মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, ভোলা ২৬০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, ভেটকি মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং পাঙাস ১৮০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাগদা ও গলদা চিংড়ির দাম সর্বোচ্চ ১৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
বৃষ্টির কারণে খুলনার অনেক ঘের ডুবে গেছে, ফলে মাছের উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ দুই-ই ব্যাহত হয়েছে। মাছ বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে মাছের আমদানি কম থাকায় খুচরা বাজারেও দামে প্রভাব পড়েছে। ক্রেতারা মাছের এই উচ্চমূল্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। একজন ক্রেতা বলেন, আগের সপ্তাহে ১৭০ টাকায় পাওয়া কনকন মাছ এখন কিনতে হচ্ছে ২৪০ টাকায়। তেলাপিয়ার দামও ১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২৪০ টাকা হয়ে গেছে।
অন্যদিকে সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি দেখা গেছে। সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় পুঁইশাক, বেগুন, পটোল, ঢ্যাঁড়শ, করলা, লাউ, লালশাক, পেঁপে, আলু, শসা, কাঁচকলা, পেঁয়াজ ও রসুনের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে। পটোল, পুঁইশাক ও ঢ্যাঁড়শ ৩০ টাকা, বেগুন ৩০-৪০ টাকা, করলা ৪০-৫০ টাকা, লাউ ৩০-৪০ টাকা, লালশাক ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ ও রসুন যথাক্রমে ৬০-৭০ এবং ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাংসের বাজারেও ব্রয়লার মুরগি, সোনালি মুরগি ও লেয়ার মুরগির দামে কিছুটা স্বস্তি রয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ১৬০-১৭০ টাকা কেজি, সোনালি ২৭০-২৮০ টাকা, লেয়ার ২৬০-২৭০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, মাছের দামে এই বাড়তি চাপ সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খরচে বড় প্রভাব ফেলছে। সবজির দাম কিছুটা কমলেও, মাছ ছাড়া দিনের খাবার যেন অসম্পূর্ণ—এই চাহিদার কারণেই ক্রেতাদের মাছ কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। বৃষ্টিপাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মাছের উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।