প্রকাশিত : মঙ্গলবার , ৩ জুন ২০২৫ , সকাল ১১:৪২।। প্রিন্ট এর তারিখঃ শনিবার , ১৬ আগস্ট ২০২৫ , বিকাল ০৫:৪৯
রিপোর্টার : খুলনা ডেস্ক

পরিবেশবান্ধব সাইকেল বানিয়ে বিশ্ববাজারে বাগেরহাটের জয়যাত্রা


রিপোর্টার : the investor

আজকের দিনে বাইসাইকেল কেবল যাতায়াতের মাধ্যম নয়, হয়ে উঠেছে পরিবেশ-সচেতনতা আর সৃষ্টিশীলতার এক অনন্য প্রতীক। জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক বাইসাইকেল দিবসে যখন গোটা বিশ্বে এই দ্বিচক্রযানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য উদযাপিত হচ্ছে, তখন বাংলাদেশের বাগেরহাট থেকে ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে এক ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ—কাঠের তৈরি শিশুদের সাইকেল।

বাগেরহাট বিসিক শিল্পনগরীর ‘ন্যাচারাল ফাইবার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করছে সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি ‘বেবি ব্যালান্স বাইক’। এই বাইসাইকেলের প্রতিটি অংশ—চাকা থেকে শুরু করে ফ্রেম পর্যন্ত—সবই কাঠ দিয়ে নির্মিত। এই অভিনব পণ্যটির প্রতি দৃষ্টি পড়েছে ইউরোপের পরিবেশবান্ধব পণ্যের অনুরাগী ক্রেতাদের। গ্রিসের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান কোকো-ম্যাট ইতিমধ্যে তিন লাখ কাঠের সাইকেল রপ্তানির অর্ডার দিয়েছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানটিকে।

পণ্য তৈরির পেছনে রয়েছে ধৈর্য ও কারিগরি দক্ষতা। প্রতিটি সাইকেল তৈরি করতে প্রয়োজন হয় ১১টি আলাদা কাঠের অংশ, যা বিভিন্ন পর্যায়ে তৈরি করে দক্ষ কারিগররা একত্রে সংযুক্ত করেন। এরপর রঙের পরিপাটি ছোঁয়ায় সেটি হয়ে ওঠে ইউরোপমুখী এক শৈল্পিক বাহন। গড়ে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লাগে একটি সাইকেল সম্পূর্ণ প্রস্তুত করতে।

প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয় একদম ভিন্ন চিন্তা থেকে। দুই দশক আগে যখন বাগেরহাটের নারিকেলের তেলের খ্যাতি ছিল সারা দেশে, তখন সেই নারিকেলের ফেলে দেওয়া ছোবড়ার মধ্যে সম্ভাবনার আলো খুঁজে পান মোস্তাফিজ আহমেদ। ছোবড়া থেকে তৈরি হয় ম্যাট্রেসের কয়ার ফেল্ট, পরে সেখান থেকে তৈরি হতে থাকে পরিবেশবান্ধব স্লিপার, কোকোপিট—এবং এখন কাঠের সাইকেলও।

এভাবেই এক সময়ের পরিত্যক্ত উপকরণ এখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের সৃজনশীলতা, কারিগরি দক্ষতা আর পরিবেশবান্ধব মনোভাবের ছাপ। ইউরোপে পা রাখা এই সাইকেল শুধু ব্যবসা নয়, এটি হয়ে উঠেছে একটি গল্প—একটি জাতির সম্ভাবনার, এক মানুষের দূরদর্শিতার, আর একটি ভবিষ্যতের, যেখানে কাঠের চাকার ঘূর্ণনে ধরা পড়ে টেকসই উন্নয়নের গতি।