প্রকাশিত : বুধবার , ২৩ জুলাই ২০২৫ , দুপুর ০১:৫৪।। প্রিন্ট এর তারিখঃ শনিবার , ১৬ আগস্ট ২০২৫ , বিকাল ০৫:৫৫
রিপোর্টার : খুলনা ডেস্ক

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পূর্ণ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার দাবি ব্রিটিশ এমপি ও লর্ডদের


রিপোর্টার : the investor

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের প্রায় ৬০ জন এমপি ও লর্ড ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়েছেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ও বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডসের কাছে পাঠানো এক যৌথ চিঠিতে তাঁরা এই আহ্বান জানিয়েছেন। এতে সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানিতে ব্রিটিশ সরকারের জারি করা রপ্তানি লাইসেন্স ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, ইসরায়েল যদি অবিলম্বে গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ না করে, তাহলে সেখানে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা উচিত। তা না হলে, ব্রিটিশ সরকার গণহত্যায় পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে বলে মনে করা যেতে পারে। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী আইনপ্রণেতাদের মধ্যে রয়েছেন লেবার পার্টির জেরেমি করবিন, জন ম্যাকডোনেল ও জারাহ সুলতানার মতো পরিচিত নাম।

চিঠির অন্যতম উদ্যোগতাতা লেবার এমপি স্টিভ উইদারডেন বলেন, গাজায় ইসরায়েল যেসব যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে, তার ১৫ শতাংশ যন্ত্রাংশ তৈরি হচ্ছে ব্রিটেনে। এ যুদ্ধবিমানগুলো ব্রিটিশ রপ্তানি লাইসেন্স ছাড়া উড়তে পারত না, হামলা চালাতে পারত না। তাই সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা একান্ত জরুরি।

২০২৪ সালে ব্রিটেন থেকে ইসরায়েলে ১৪২ মিলিয়ন পাউন্ডের সামরিক রপ্তানি লাইসেন্স অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে ট্রেডমন্ত্রী ডগলাস আলেকজান্ডার দাবি করেছেন। তাঁর মতে, এসব লাইসেন্সের অধিকাংশ তৃতীয় দেশে, বিশেষত ন্যাটো মিত্রদের কাছে পুনঃরপ্তানির জন্য অনুমোদিত। তবে সংসদ সদস্যরা প্রশ্ন তুলেছেন যদি সেটাই সত্য হয়, তাহলে ইসিজেইউ (Export Control Joint Unit)-এর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী অধিকাংশ লাইসেন্স সরাসরি ইসরায়েলের উদ্দেশে কীভাবে ইস্যু হলো?

চিঠিতে সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে এই প্রকল্প ও সংশ্লিষ্ট ন্যাটো মিত্র দেশের নাম প্রকাশ করতে, জানাতে কবে থেকে এটি চালু এবং প্রকৃত উদ্দেশ্য কী। পাশাপাশি এমপিরা জোর দিয়েছেন, এমন দেশগুলোর কাছে অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারের সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা উচিত, যারা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বেসামরিক জনগণের ওপর হামলা চালায়।

ব্রিটিশ হাইকোর্ট সম্প্রতি এক মামলায় মানবাধিকার সংস্থাগুলোর করা আবেদন খারিজ করেছে, যেখানে দাবি করা হয়েছিল—ইসরায়েলে ব্রিটিশ যন্ত্রাংশের রপ্তানি বন্ধ করতে হবে। আদালত জানিয়েছে, এটি আদালতের বিচারাধীন বিষয় নয় বরং রাজনৈতিক নির্বাহী বিভাগের এখতিয়ারভুক্ত।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ইতোপূর্বে জানিয়েছিলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি না হলে ব্রিটেন আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে। তিনি আইটিভি-তে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইসরায়েলের কার্যক্রমে পরিবর্তন না এলে, সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ অন্যান্য বিকল্প বিবেচনায় আছে। ইতোমধ্যে ব্রিটেন অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্সসহ ২৭টি দেশের সঙ্গে একযোগে ইসরায়েলের সমালোচনা করেছে এবং গাজায় মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে সংসদ সদস্যদের দাবি স্পষ্ট—ইসরায়েলের প্রতি ব্রিটেনের নীতিমালা ও অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও মানবিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। জনসাধারণ, সংসদ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জবাবদিহিতা থাকা জরুরি, বিশেষত তখনই যখন কোনো রপ্তানি গণহত্যা বা মানবাধিকার লঙ্ঘনে ভূমিকা রাখতে পারে।