
নারায়ণগঞ্জ সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমি-জমার দলিল সম্পাদনে দীর্ঘদিন ধরে গলাকাটা ফির নামে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। অনিয়ম এখানেই শেষ নয়, প্রকাশ্যে চলে ঘুষ আদান-প্রদান। কাগজপত্রে বিন্দুমাত্র ভুল পেলে যেন ঘুষের মাত্রাও বেড়ে যায়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, নির্ধারিত ফির বাইরে অতিরিক্ত টাকা না দিলে কাজ হয় না এই অফিসে। জমির দলিল আটকে রেখে ভুক্তভোগীদের চাপের মুখে ঘুষ দাবি সাব-রেজিস্ট্রার, উমেদার ও নকলনবিশদের নিয়মিত আচরণে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মোহরার বা সংশ্লিষ্টদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে উপজেলার নিম্ন আয়ের থেকে মধ্য আয়ের সাধারণ মানুষ সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত মোটা অঙ্কের ব্যয় করে দলিল সম্পাদন করতে বাধ্য হচ্ছেন। অফিসের মধ্যে সরকার নির্ধারিত ফি আদায়ের তালিকা টানানো থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। তালিকায় বিভিন্ন প্রকৃতির দলিলের মধ্যে সাফ-কবলা, হেবা ঘোষণাপত্র, দানপত্র ও বন্ধকী দলিল সম্পাদনের জন্য পৃথক ফি উল্লেখ রয়েছে। তারপরও উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমি ক্রেতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের এক মোহরার জানান, প্রতিটি দলিল সম্পাদনের বিপরীতে দলিলে উল্লিখিত জমির মোট মূল্যের ওপর ১ শতাংশ টাকা অফিসকে দিতেই হবে। এই ১ শতাংশ টাকা অফিসকে না দিলে দলিল সম্পাদন হয় না। ১ শতাংশ খরচের মধ্যে বরাদ্দ সাব রেজিস্ট্রার খরচ, আউটসোর্সিংয়ে নকল নবিশদের খরচ, আফিস খরচ ইত্যাদি। শুধু তাই নয়, দলিলের নকল উঠাতেও গুনতে হয় বাড়তি দুই থেকে তিন হাজার টাকা।
দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও অনিয়ম-দুর্নীতির আতুর ঘরে পরিণত হওয়া নারায়ণগঞ্জ সদর রেজিস্ট্রি অফিসে পতিত সরকারের সিন্ডিকেট, দালালদের রোষানলে ও বিকল্প কৌশলে প্রতি দলিল থেকে অফিস খরচের নামে মৌজা রাউন্ড ফিগারের উপর ভিত্তি করে ০.৫% থেকে ১% অতিরিক্ত খরচ নেওয়া, বিশেষ করে অবৈধ লেনদেনগুলো হয়ে থাকে নিয়োগবহির্ভূত উমেদার ও অফিস সহকারীর মাধ্যমে। এছাড়াও সেরেস্তা খরচের নামে দলিল লেখক ভেন্ডার সমিতির নেতাদের সখ্যতায় দলিল প্রতি লাখে ৩০০ থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি টাকা দিতে হয় সেবাগ্রাহকদের। দাতাগ্রহিতার মধ্যে জমির প্রকৃত বিনিময় মূল্য বেশি হলেও তা সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকদের সহায়তায় কম দেখানো হয়। যে কারণে প্রকৃত রেজিস্ট্রেশন ফি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
সাব রেজিস্ট্রার আব্দুল্লাহ আল ইমাম নিটলের অনিয়মের আমলনামা বিগত দিনেও কোনো অংশে কম ছিলো না। ঢাকার মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যান হাউজিং এ বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিক, এছাড়াও দেশের বাড়িতে করেছেন অঢেল সম্পদ। পূর্ববর্তী কর্মস্থল নেত্রকোনা সদরে দায়িত্বকালীন সময়ে করেছে নানা অনিয়ম।
দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক টিমের তদন্তে উঠে আসা এসব অনিয়ম প্রসঙ্গে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুল্লাহ আল ইমাম নিটলের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎকার নিতে গেলে অফিসের সিন্ডিকেট চক্রের বাধার সম্মুখে পড়ে মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি এবং প্রতিবেদকের সাথে সাব রেজিস্ট্রারের ব্যস্ততার নানা টালবাহানা দেখিয়ে প্রতিবেদককে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করে।