
কৃষি খাতের উন্নয়নে সার উৎপাদন, আমদানি, সরবরাহ সহজীকরণ এবং সর্বোপরি সরকারের ভর্তুকি ব্যবস্থা চালু থাকলেও এক্ষেত্রে কৃষক ও কৃষিখাতে শেষ পর্যন্ত তা গিয়ে পৌঁছায় না। নানা অনিয়ম দুর্নীতি এবং সুবিধাভোগীদের দৌরাত্ম থাকায় কৃষকের কাছ পর্যন্ত সারে দেওয়া ভর্তুকি যেমন পৌঁছায় না, আবার কৃষক সহজে, ন্যয্যমূল্যেও সার সরবরাহ পায় না।ভুক্তভোগীদের মতে, কৃষি ও কৃষকদের জন্য দেওয়া সুবিধা লুটপাটকারীরা রয়েছে মন্ত্রনালয় থেকে ডিলার পর্যন্ত বিস্তৃত। যারা লুটপাঠ ভাগাভাগি করে নিতেএকে অপরের সাথে নিবিড়ভাবে সিন্ডিকেট হয়ে রয়েছে। যার কবল থেকেকৃষক মুক্তি পাচ্ছে না।
সাধারণত
ইউরিয়া, এমওপি,
টিএসপি সার
কৃষি ক্ষেত্রে
বেশি প্রয়োজন
হয়।সরকার সারের
সরবরাহ ও
দাম সহনীয়
রাখতে কেজি
প্রতি প্রায়
৮০-১০০টাকা
ভর্তুকি দিয়ে
থাকে।
কিন্তু তা
কৃষকের কাছে
না পৌঁছানোর
কারণ কি
কি রয়েছে?
তা সমাধানই
বা হচ্ছে
না কেনো?
যেখানে সারের
বাজার দরও
নির্ধারণ করে
দেওয়া থাকে। এরপরও
সারের দাম
বাড়ছে কেনো?
বর্তমান
বাজার পর্যবেক্ষণ
করে দেখা
যায়, ১২৫০
টাকার ইউরিয়া
কৃষকের কাছে
বিক্রি হচ্ছে
১৪০০ টাকায়,
৯০০ টাকার
এমওপি বিক্রয়
হচ্ছে ১১০০
টাকায়, ১২৫০
টাকার টিএসপি
বিক্রয় হচ্ছে
১৪০০ টাকায়। দেশে
সার উৎপাদনের
সাথে প্রয়োজনীয়
ক্ষেত্রে আমদানিও
করা হয়ে
থাকে।বেসরকারিভাবে যারা
আমদানি করছে
সেখানেও সরকারি
ভর্তুকির ব্যবস্থা
রয়েছে।
কিন্তু এই
সার বিতরণে
ডিলার সিন্ডিকেট
ঘাপলা করে
রেখেছে সরবরাহ
এবং বিতরণ
ব্যবস্থায়।
যার মূল
ইন্ধনদাতা হিসেবে
যুক্ত রয়েছেন
কৃষি মন্ত্রণালয়,
বিসিআইসি, বিএডিসি,
জেলা-উপজিলা
কৃষি অফিস,
জেলা প্রশাসন
অফিস পর্যায়ের
কিছু দুনীতিবাজ
কর্মকর্তা-কর্মচারী।
বিতরণে
সুষ্ঠ সমন্বয়ে
দেশে বিসিআইসি’র ইউরিয়া সার
ডিলার সংখা
৫০০০ এর
বেশি।
ইউনিয়ন পর্যায়ে
একজন ডিলার
দেবার কথা
থাকলেও একাধিক
ডিলার রয়েছে
বেশির ভাগ
যায়গায়।
এমনকি এক
পরিবারে ৭জনও
আছে এমন
কথা বলছে
তৃণমূল থেকে। মনোপলি
ঠেকাতে ও
ভাগ করে
ইউনিয়ন পর্যায়ে
সারের বিতরণ
ব্যবস্থা করা
হলেও কাজের
বেলায় সেখানে
রয়েছে ভয়ানক
দুর্নীতি ও
গরমিল।
যেমন, ফরিদপুর
অঞ্চলে বোয়ালমারী
পৌরসভার বাবুলের
একই পরিবারে
সালাম ট্রেডার্স
(বাবুল), শাহনাজ
ট্রেডার্স (বোন),
সাখাওয়াত ট্রেডার্স
(ভাই), এভাবে
পরিবারের অন্যদের
নিয়ে বিসিআইসির
প্রায় ৭টির
বেশি ডিলারশীপ
রয়েছে বলে
জানাগেছে।
প্রয়োজনের বাইরে
আসা সার
এদের অন্যত্র
বিক্রি করে
দেওয়াই স্বাভাবিক। এভাবে
আবার অনেকের
ডিলারশীপ পাড়াগ্রাম,
ইউনিয়ন পর্যায়ে
হলেও এরা
সেখানে যান না, থানা,
পৌরসভা বা
জেলা সদরে
কার্যক্রম পরিচালনা
করছেন।
সারাদেশেই এমন
ডিলার দখলদারিত্বের
মাধ্যমে তৃতীয়
পক্ষের কাছে
সার বিক্রি
করে বিশাল
আয়ের ফাঁদ
পেতে রেখেছে
একটি শ্রেনী। বিসিআইসির
একটি সারের
ডিলার থাকা
মানে বিশাল
অঙ্কের টাকার
মালিক হবার
উপায়।
যার ফলে
সুবিধাভোগীদের কারসাজিতে
পড়ে কৃষককে
বেশি দামে
সার কিনতে
হচ্ছে।
এক্ষেত্রে যোগানের
সংকট না
থাকলেও সারের
দাম বাড়ছেই। সাথে
বাড়ছে কৃষি
পণ্যের উৎপাদন
খরচ।
সার
বিতরণের কারসাজিটা
তাহলে কিভাবে
হচ্ছে? এবং
এর সম্ভাব্য
সমাধান কি
হতে পারে?
নাকি কৃষি
মন্ত্রণালয়, বিএডিসি
সব জেনেও এটি সমাধানে
আগ্রহী নয়?
এসব এখন
বিরাট প্রশ্নবোধক
বিষয় হয়ে
দাঁড়িয়েছে।
অনুসন্ধান
করে দেখা
গেছে, বিএডিসি
ডিলাররা ননইউরিয়া
পাবে এভাবে
লাইসেন্স দেওয়া
হয়েছে।
এদের সব
ধরনের ননইউরিয়াও
দেওয়া হয়না। অন্যদিকে
বিসিআইসির ডিলারশীপ
দেওয়া হয়েছে
শুধু ইউরিয়া
বিতরণের জন্য। কিন্তু
বিসিআইসি ডিলাররা
ইউরিয়াও পায়
আবার ননইউরিয়াও
পায়।
অল্প কিছু
সার বিসিআইসির
এসব ডিলার
নিজেদের কাছে
দেখানোর জন্য
রাখলেও বাজারে
বেশি দামে
তৃতীয় পক্ষের
কাছে কখোনো
সরাসরি থেকে,
আবার কখোনো
স্লিপে বা
ডিমান্ড অর্ডারশিটের
মধ্যমে বিক্রি
করে দেয়। সংশ্লিষ্ঠ
গোডাউন থেকে
এভাবেই ডিলারের
নামে সার
চলে যায়
বিভিন্ন এরিয়ায়। এই
স্লিপ বিক্রি,
দরদামের জন্য
দেশজুড়েই ব্রোকার
বা সিন্ডিকেট
রয়েছে।
দাম বাড়াতে
বাজারে এরাই
সারের কৃতিম
সংকট দেখায়। মুল
ডিলাররা এসব
সার সিন্ডিকেট
মার্কেটে যে
দামে বিক্রয়
করবে সাব-ডিলার বা দোকানদাররা
প্রফিট মার্জিন
ধরে সেভাবেই
কৃষকের কাছে
সার বিক্রি
করে।
আবার এই
ক্ষেত্রে সারের
চাহিদা, সরবারাহ,
বিতরণ, মনিটরিং
প্রভৃতি পর্বে
যারা জড়িত
তাদেরও সিন্ডিকেট
করা রয়েছে,
যারা এজন্য
নিয়মিত প্রাপ্য
বুঝে পান। এদের
গদবাধা রিপোর্ট,
আস্কারা এবং
সাহস নিয়েই
ডিলাররা এসব
করে।এরাই এ
নিয়ে মন্ত্রণালয়
থেকে তদন্তে
এলে তাদের
রেডিমেট গোজামিল
বুঝিয়ে, ম্যানেজ
করে খাম
ধরিয়ে পাঠিয়ে
দিয়ে থাকেন
বলে অভিযোগ
রয়েছে।
যেমন, আগামী
নভেম্বর মাসে
চাহিদা থাকলেও
চীন থেকে
আমদানী করা
ননইউরিয়া ডিএপি সার গোপালগঞ্জ,
ফরিদপুর, মাদারীপুর,
বরগুনা, পটুয়াখালী,
পিরোজপুর, বরিশাল,
ঝালকাঠি, রাজবাড়ী,
নড়াইল সহ
প্রায় ৩০টি
জেলায় কোনো
বরাদ্দ দেয়নি
বিএডিসি ডিলারদের। এটা
একটা বড়
ধরনের বৈষম্য
বলে মনে
করছে বিজ্ঞমহল। সিজনে
নন ইউরিয়া
বিএডিসির সব
ডিলারকে দেবার
কথা।
কিন্তু সেটি
বিসিআইসির ইউরিয়া
ডিলারদের দেওয়াও
দাম বৃদ্ধির
এক ধরনের
ষড়যন্ত্র বলে
মনে করা
হচ্ছে।
বঞ্চিত ডিলাররা
কালোবাজারি সিন্ডিকেট
থেকে সার
কিনে এদের
গ্রাহক কৃষকদের
চাহিদা মেটাতে
হবে।
বিষয়টি
নিয়ে কৃষি
মন্ত্রণালয়ের সার
ব্যবস্থাপনা বিভাগের
অতিরিক্ত সচিব
ড. নুরুন
নাহার চৌধুরীকে
'আপনারা ইচ্ছা
করে কি
এর সমাধান
করছেন না, নাকি বিএডিসি
বিসিআইসিসহ অন্যরা
আপনাদের অর্ডার
মানছে না'
প্রশ্ন করা
হলে তিনি
বলেন, এখানে
যৌক্তিক অনেক
বিষয় আছে
যা সমাধানে
কাজ চলমান
রয়েছে।
আগে কি
হয়েছে সেটি
আমি বলতে
চাইনা।
কিন্তু সার
পাবার ক্ষেত্রে
কৃষকের স্বার্থ
যেনো সুরক্ষিত
হয় এজনই
আমাকে নিযুক্ত
করা হয়েছে
বলে মনে
করি।
আমি ক্রমে
এসবের অসঙ্গতি
বুঝে উঠার
চেষ্টা করছি। যে'কদিন আছি এদের
হয়েই কাজ
করবো।
বিএডিসি বা
অন্যরা আমাদের
অর্ডার না
মানার কোনো
সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, বিসিআইসি/বিএডিসি কোন ডিলার কতটুকু সার বরাদ্দ পাবে সেটা নির্ধারণ করে জেলা ও উপজেলা কমিটি। মন্ত্রণালয় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সার বরাদ্দ ও মনিটরিং কমিটি সমূহের দায়িত্ব যাচাই বাছাই করে সার বরাদ্দ দেয়া এবং সেটা মনিটরিং করা। এরপরেও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে মন্ত্রণালয় সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। দেশের কৃষি এবং কৃষকদের স্বার্থে মন্ত্রণালয় সকল প্রকার অনিয়ম রোধে সচেষ্ট রয়েছে।
তাহলে
এর সম্ভাব্য
কি প্রতিকার
থাকতে পারে?
প্রথমত প্রত্যেক
ইউনিয়নে একজন
ইউরিয়া এবং
একজন নন
ইউরিয়া ডিলার
রাখা হোক। কৃষি
জমিও সারের
চাহিদার সমন্বয়
করে প্রত্যেক
জেলায় গুদাম
ব্যবস্থা করে
সেখান থেকেই
সার বিতরণের
ব্যবস্থা করা
হোক।
বিএডিসির ডিলারদের
যদি শুধু
ননইউরিয়া দেওয়া
হয় তাহলে
বিসিআইসির ডিলারদের
ননইউরিয়া দেওয়া
যাবে না,
শুধু ইউরিয়া
দিতে হবে। যদি
বিসিআইসির ডিলারদের
নন ইউরিয়া
দেওয়া হয়
তবে বিএডিসির
ডিলারদের সমহারে
ইউরিয়া দিতে
হবে।
প্রত্যেকের চাহিদা,
সরবরাহ এবং
অন্যান্য বিষয়ে
ডাটাবেজ থাকতে
হবে।মনিটরিংয়ের জন্য
প্রত্যেক জেলায়
কৃষককে ব্যবহার
করতে হবে,
কৃষকের মাঠে
যেতে হবে,
কৃষকের কাছে
বিকল্প লোক
দিয়ে সারের
দাম পর্যবেক্ষণ
করতে হবে। একই
পরিবারে যারা
৭/৮
জন করে
ডিলারশীপ লাইসেন্স
লুটপাট করেছে
তাদের ডাটাবেজ
করে এদের
বিষয়ে প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা নিতে
হবে।