• ঢাকা
  • শনিবার , ১৬ আগস্ট ২০২৫ , ভোর ০৫:১৪
ব্রেকিং নিউজ
হোম / বাণিজ্য
রিপোর্টার : বিশেষ প্রতিবেদক:
অনিয়ন্ত্রিত ক্যাবলস শিল্প খাতে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে বিনিয়োগ

অনিয়ন্ত্রিত ক্যাবলস শিল্প খাতে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে বিনিয়োগ

প্রিন্ট ভিউ

বাংলাদেশের বৈদ্যুতিক কেবলস সেক্টর খুব একটা বড় নয়। এরপরও অদৃশ্য কারণে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে এই খাতে বিনিয়োগ। মার্কেটের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলেও কেনো নতুন নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে? এই শিল্পখাতে ধ্বস বা বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কার মধ্যেও অস্বাভাবিক বিনিয়োগ প্রবণতা কি কারণে হতে পারে এ নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

অতীতে বিভিন্ন শিল্প খাতে এমন হুজুকে বিশাল বিনিয়োগ করার কারণে ব্যাংকসহ বিনিয়োগকারীদের লোকসানে পড়ে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। অন্যদিকে নানা কারণে ক্যাবলস খাতে চলছে অসুস্থ প্রতিযোগীতা। এতে সঠিক মান বজায় রেখে সৎভাবে ব্যবসা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে অসুস্থ প্রতিযোগীতায় পড়ে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে, অনেক কারখানা বন্ধ হবার পথে রয়েছে। ক্যাবলস সেক্টরে এমন অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত বিনিয়োগ রোধে সরকারকে দ্রুত সময়ে সক্রিয় ভুমিকা পালন করতে হবে।  

অভিজ্ঞ মহল বলছেন, ক্যাবলস সেক্টরে বেশিরভাগ কর্পোরেট গ্রুপের সম্পৃক্ত হবার মূল উদ্দেশ্য দুই ধরনের। প্রথমত কালো টাকা সাদা করতে এবং রাজস্ব ফাঁকি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিশাল অর্থ লুটপাট করা। দ্বিতীয়ত কোনো স্বনামধন্য ক্যাবলস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান খেকে বরখাস্ত হওয়া বা সেখান থেকে চাকরি ছাড়ার পর বিশেষ সুবিধার লক্ষ্য নিয়ে ঐসব ব্যাক্তি বিভিন্ন কর্পোরেট কোম্পানিকে ক্যাবলস সেক্টর সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহিত করে। এরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কর্পোরেট কোম্পানির সংশ্লিষ্ঠ বিভাগের প্রধান হবার জন্য, মেশিনারিজ ক্রয়ের সময় কমিশন খাওয়াসহ ব্যাক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে থাকে । 

বিজ্ঞ মহল বলছেন, এই সেক্টরে নতুন বিনিয়োগ মানেই বিপদজনক সিদ্ধান্ত ও লোকসানে পড়া। প্রশ্ন জাগতে পারে এই সেক্টরে তাহলে কি হচ্ছে?  তথ্যমতে, দেশে  প্রায় ২৫টি ক্যাবলস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স আছে বলে জানাগেছে। এরমধ্যে কর্পোরেট গ্রুপই রয়েছে ডর্জন খানেক। এরপরও প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কর্পোরেট গ্রুপ, প্রাইভেট কোম্পানি এই খাতে বিশাল বিনিয়োগ নিয়ে যুক্ত হচ্ছে। আছে দেশি-বিদেশী জয়েনভেঞ্চার, পাবলিক লিমিটেড, প্রাইভেট লিমিটেড, রাষ্ট্রায়ত্ব, ব্যাক্তি মালিকানা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান। শুধু ক্যাবলস তৈরি ও স্পেশালিষ্ট একাধিক কোম্পানিও রয়েছে এই খাতে। এর সাথে যুক্ত রয়েছে অন্যান্য সাব সেক্টর যেমন, ট্রান্সমিটার, ফ্যান, মটর প্রভৃতি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির প্রতিষ্ঠানও। অন্যদিকে শতাধিক কারখানা রয়েছে লাইসেন্স বিহীন। যাদের কাজ ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে অত্যান্ত নিম্নমানের কাচামাল দিয়ে নামিদামি ব্রান্ডের ক্যাবলস নকল করা।  

ক্যাবলস এর কাঁচামাল হলো কপার ক্যাথড, কপার রড, এলুমনিয়াম ক্যাথড, এলুমনিয়াম রড ও প্লাস্টিক দানা। সঠিক শুল্ক প্রদান করে এ গ্রেড কাঁচামাল দিয়ে সঠিক প্রযুক্তিতে ক্যাবলস, কন্ডাক্টর বানানো হলে এবং সঠিক হারে ভ্যাট যুক্ত করা ক্যাবলসের স্টান্ডার্ড দাম পড়ার কথা। কিন্তু বাজার বিশ্লেষণ করলেও দেখা যায় ক্যাবলস কন্ডাক্টরের যে দাম তা এগ্রেড কাঁচামালের সমান। অন্যদিকে বিনিয়োগ বাড়লেও সে হারে এই খাত থেকে বড়বড় কর্পোরেট কোম্পানির রাজস্ব বাড়ছে না। 

অভিজ্ঞদের মতে, এই সেক্টরে হরিলুটের কালো টাকা বিনিয়োগ, কাঁচামালআমদানিতে শুল্ক ফাঁকি, বিক্রয়কালে ভ্যাট ফাঁকি, পরিমাপ ও কোয়ালিতে ফাঁকি, লোকাল স্ক্রাব ব্যবহার এবং সর্বোপরি ক্যাবলস নকল হয়ে বিক্রি হবার মাধ্যমে চলছে ক্যাবলস সেক্টরের কর্মকান্ড। যা জানমালকে ঝুঁকিপূর্ণ করেছে, অর্থনীতিকেও লোকসানী করছে।

এই বিষয়ে এসকিউ গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর মোহাম্মদ শফিউদ্দিন শামীম বলেন, এই সেক্টরে বিনিয়োগ জ্ঞান না থাকায় এরই মধ্যে অনেক ক্যাবল ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়েছে এবং কিছু বন্ধের কাছাকাছি রয়েছে। এরপরও লোকজন এই খাতে কেন বিনিয়োগ করছে বুঝতে পারছি না। এ খাতে মুনাফা খুবই কম। আমার বিশ্বাস, ক্যাবল ফ্যাক্টরি থেকে যারা বরখাস্ত করা হয়েছে, তারা নতুন নতুন কর্পোরেট হাউসকে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করছে মিথ্যা বক্তব্য ও লোভ দেখিয়ে  যে, এখানে অনেক বেশি লাভ! প্রধানত সেই ব্যক্তির টার্গেট সিইও পদের জন্য। পাশাপাশি এধরনের কোম্পানি সেটআপ করতে নতুন মেশিনারিজ ক্রয়ের সময় কমিশন আয় করতে পারে। বেশিরভাগ নতুন কর্পোরেট কোম্পানি সঠিক বিশ্লেষণ ছাড়াই এই সেক্টরে বিনিয়োগ করছে। এদেশে স্বনামধন্য একাধিক কর্পোরেট হাউসকে এভাবে ভ্রান্ত ধারনা দিয়ে বিনিয়োগ করা হয়েছে যাদের নাম উল্লেখ করতে টাই না। সেসব কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করলেই তাদের বর্তমান অবস্থা জানা যাবে। তিনি বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলকেও এই খাতে লোন দেওয়া বা বিনিয়োগ করা উচিত নয়। কারণ বর্তমান যে পরিমাণ কেবলস কোম্পানি আছে তাতে উৎপাদন সক্ষমতা চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি রয়েছে। যাদের বিনিয়োগ করার আগ্রহ এবং  প্রয়োজনীয় টাকা আছে; তারা নতুন প্রযুক্তি ভিত্তিক শিল্প-কারখানার জন্য বিনিয়োগ করতে পারেন। তিনি বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবশ্যই এই খাতে বিনিয়োগকারীদের অর্থের উৎস খতিয়ে দেখতে হবে যাতে অসাধুরা সুযোগ নিতে না পারে। অন্যদিকে রাজস্ব ফাঁকি রোধে এনবিআরকে অবশ্যই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে হবে।

বাণিজ্য

আরও পড়ুন