ঝলমলে আলো, উৎসবের সাজসজ্জা এবং বিশাল ক্রিসমাস ট্রি কয়েক দশক ধরে গাজা শহরকে আলোকিত করেছিল। একসময় উৎসবের চেতনায় জীবিত ছিল যে শহর, সেখানে আজ অজানা সৈনিকদের ভিড়।
এ বছর ইসরায়েলের নিষ্ঠুর আগ্রাসনে ফিলিস্তিনি অঞ্চলটির দৃশ্যপট বদলে গেছে। মলিন হয়ে গেছে এখানকার উৎসব। একই অবস্থা ক্রিসমাসের ক্ষেত্রেও।
এক বছরের বেশি সময় ধরে বিমান হামলায় গাজার বেশিরভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। এর মধ্যেই যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরের শত শত খ্রিস্টানরা গির্জায় জড়ো হয়ে যুদ্ধের অবসানের জন্য প্রার্থনা করছেন।
সেন্ট পোরফাইরিয়াসের দ্বাদশ শতাব্দীর গ্রীক অর্থোডক্স চার্চে কয়েক সপ্তাহ ধরে আশ্রয় নেওয়া জর্জ আল-সায়েঘ বলছিলেন, ‘এই ক্রিসমাস মৃত্যু ও ধ্বংসের দুর্গন্ধ বহন করছে।’
তিনি বলেন, ‘আনন্দ নেই, উৎসবের আমেজ নেই। আগামী ছুটির আগে কে বাঁচবে, তাও আমরা জানি না।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গির্জার একটি অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। এতে ১৮ ফিলিস্তিনি খ্রিস্টান নিহত হয়।
গাজায় প্রায় ১ হাজার ১০০ খ্রিস্টান বাস করে। তারাও গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছেন। ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান হামলা নিয়ে পোপ ফ্রান্সিসও নিন্দা জানান।
সাপ্তাহিক প্রার্থনার পরে পোপ বলেন, ‘বেদনা নিয়ে আমি গাজার কথা ভাবি - এত নিষ্ঠুরতার কথা, শিশুদের মেশিনগান দিয়ে হত্যা করার কথা, স্কুল ও হাসপাতালে বোমা হামলার কথা ভাবি। কী নিষ্ঠুরতা!’
স্থানীয় খ্রিস্টান বাসিন্দা জামিল সিজার অ্যান্টন বলছিলেন, ‘গাজায় এই বেদনা, এই দুঃখ বড়দিনের উৎসবের মৌসুমকে গভীর শোকে বিষণ্ণ করেছে।’
গত ডিসেম্বরে হলি ফ্যামিলি চার্চ প্রাঙ্গণে ইসরায়েলি স্নাইপারের গুলিতে তার স্ত্রী নাহিদা ও মেয়ে সমর নিহত হন। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তির জন্য প্রার্থনা করি, যুদ্ধ শেষ হওয়ার জন্য প্রার্থনা করি, যাতে লোকেরা নিরাপদে বাঁচতে পারে।’
স্থানীয় বাসিন্দা রামেজ আল-সুরিও অ্যান্টনের অনুভূতির প্রতিধ্বনি করেন। তিনি সেন্ট পোরফাইরিয়াসের চার্চে বিমান হামলার সময় একটি তিক্ত ট্র্যাজেডির শিকার হয়েছিলেন। ওই হামলায় নিহতদের মধ্যে তার তিন সন্তানও রয়েছে।
রামেজ আল-সুরিও বলেন, ‘আমরা এখনো ভুগছি। ধ্বংসের কারণে আমরা গত বছরও উদযাপন করিনি। এই বছর আমরা যুদ্ধ শেষ হওয়ার আশা করেছিলাম, কিন্তু প্রতিদিনই আমরা প্রিয়জনদের হারাচ্ছি।’
স্থানীয় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতা জর্জ অ্যান্টন আশা করছেন, যুদ্ধরত পক্ষগুলো শিগগিরই লড়াই শেষ করবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সব পক্ষকে যুদ্ধের অবসান এবং শান্তির সত্যিকারের পথ খোঁজার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আশা করি, উভয় দেশের মানুষ সম্প্রীতি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে।’