• ঢাকা
  • শনিবার , ১৬ আগস্ট ২০২৫ , ভোর ০৫:৩১
ব্রেকিং নিউজ
হোম / জাতীয়
রিপোর্টার : মোঃ মাহাবুবুর রহমান
দুর্নীতিবাজ ও ভুয়া সনদের দায়ে অভিযুক্তরাও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির তালিকায়?

দুর্নীতিবাজ ও ভুয়া সনদের দায়ে অভিযুক্তরাও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির তালিকায়?

প্রিন্ট ভিউ

জাতীয় রাজস্ববোর্ড কাস্টমস এক্সসাইজ ও ভ্যাট অনুবিভাগের তৃতীয় শ্রেণীর কতিপয় কর্মচারী ভূয়া সনদ দাখিল করে পদোন্নতি পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের অভিযোগও রয়েছে। তারা প্রত্যেকেই হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। এখন তারা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পেতে মোটা দাগের টাকা খরচ করে  তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ জানা গেছে।

খবর নিয়ে জানা যায়, গত ২৭ অক্টোবর কাস্টমস এক্সসাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমীর মহাপরিচালক একেএম নুরুল হুদা আজাদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বিভাগীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৪৪৫ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। ওই তালিকায়  কিছু সিপাহী, সাব-ইন্সপেক্টর ও সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার এর নাম উঠে এসেছে। যারা তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী পদে চাকরি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। পদোন্নতির তালিকায় তাদের নাম উঠায় পুরো ডিভিশন জুড়ে কানাঘুষা শুরু হয়েছে।

তৃতীয় শ্রেণীর এসব দুর্নীতি পরায়ণ কর্মচারী সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার তালিকায় টাকার বিনিময়ে নাম লেখিয়েছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে । সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির খসড়া তালিকায় সাব-ইন্সপেক্টর ছিফাত উল্লাহ'র নাম রয়েছে। তিনি আপাদমস্তক একজন দুর্নীতি পরায়ন কর্মচারী হিসেবে পরিচিত। ২০০৯ সালের ৫ এপ্রিল সিপাহী পদে যোগদান করেন ছিফাত উল্লাহ। এরপর থেকে তাকে আর পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরবর্তীতে জৈষ্ঠতার ভিত্তিতে সাব-ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পান ছিফাত। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে এআরও পদে পদোন্নতির জন্য ১১ ডিসেম্বর ১৭০ জনের ডিপিসি অনুষ্ঠিত হবে।

তথ্যসূত্রে জানা গেছে, ১৭০ জনের তালিকার মধ্যে সিফাত উল্লাহ সহ আরো অনেকের বিরুদ্ধে  ইতোপূর্বে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূয়া সনদ দাখিলের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৬ সালে পদোন্নতির জন্য নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের তালিকায় ছিফাত উল্লাহসহ আরও ৩/৪ জনের ভূয়া সনদ দাখিলের কারণে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। তারা আবারো বিএসএস পরীক্ষায় একই পন্থা অবলম্বন করেছেন। ওই সময়ে তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া সনদ দাখিলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে  পদোন্নতি দেয়া হয়নি। তবে  ভুয়া সনদ দাখিলের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি কর্তৃপক্ষ। যেকারণে তারা আবারো সাহস পেয়েছেন ভূয়া সনদ দাখিল করে পরীক্ষায় অংশ নিতে।

এ ব্যাপারে রাজস্ব বোর্ডের সদস্য শুষ্ক ও ভ্যাট (প্রশাসন) ফারজানা আফরোজ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি উক্ত বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে  শুনেন। ২০১৬ সালের পদোন্নতির পরীক্ষা উত্তীর্ণ তালিকা দেখে বিস্ময় প্রকাশও করেন। তিনি বলেন সর্বপ্রথম অনুসন্ধান করে দেখতে হবে কেন ২০১৬ সালের পদোন্নতি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও পদোন্নতি পাননি। আর যদি কেউ ভুয়া  সনদ দাখিল করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা তা অবশ্যই অনুসন্ধান করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভ্যাট কমিশনারের দক্ষিণ এর খসড়া তালিকায় ছিফাত উল্লাহ'র নাম ১৭০ জনের তালিকায় আছে কিনা তা দেখা হবে। তিনি আরো বলেন এই জাতীয় অভিযোগ আমরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবো অবশ্যই।

এদিকে পদোন্নতি প্রাপ্ত ১৭০ জনের তালিকায় ডিপিসি বোর্ড বসার পূর্বে তা যাচাই করার দাবি করেছেন পদোন্নতি প্রত্যাশীরা।  তথ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ১৭০ জনের নিকট থেকে ৫০ লাখ টাকা উৎকোচ হিসেবে গ্রহন করেছে বলে কথা উঠেছে। ওই কর্মকর্তা টাকা পেয়ে বাসায় বসে পদোন্নতির ফাইলে সাইন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিছু দিন আগে ওই কর্মকর্তা ৮৯ জন কর্মচারীর পদোন্নতির ফাইল আটকিয়ে কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে ফাইলে সই করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

দক্ষিণ কমিশনারেট কার্যালয়ে কর্মরত তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী  সাব-ইন্সপেক্টর ছিফাত উল্লাহ গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার বরুন গ্রামে অবৈধ উপার্জনের টাকা দিয়ে অগাধ সম্পদ ক্রয় করেছেন। সরজমিনে গোয়েন্দা ডায়রির  অনুসন্ধানী টিম কাপাসিয়া  গিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা বলে ছিফাত উল্লাহ'র ধন ভান্ডারের খবর জানতে পেরেছে । সামান্য তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারী ছিফাত উল্লাহ কিভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন সে প্রশ্ন কাপাসিয়া বাসির। একই কার্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী আমিনুল ইসলাম খান ঢাকায় ফ্ল্যাটসহ গ্রামের বাড়িতে কোটি টাকার সম্পদ করেছেন। শুধু তাই নয়, ১১৩ মুক্তিযোদ্ধা ফারুক (তসলিম সড়ক) পূর্ব রামপুরায় চতুর্থ তলা ডিআইটি রোডে ঢাকা ইকরা জব ট্রেনিং সেন্টার নামক  যৌথ মালিকানা ছিফাতউুল্লাহ,এএসআই, মালেক পটোয়ারী এএস আই ও ‍আমান উল্লাহ অফিস সহকারী ইটি শাখা,সদর,দপ্তর (ঢাকা দক্ষিন কমিশনারেট)একটি ট্রেনিং সেন্টার গড়ে তুলেছেন।

উক্ত ট্রেনিং সেন্টার থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী চাকুরীর নিশ্চয়তা প্রদানসহ ট্রেনিং দেয়া হয়। ওই ট্রেনিং সেন্টারে এনবিআর এর উধ্বর্তন অনেক কর্মকর্তাদের দিয়ে ক্লাস নেয়া হয়। এটা শিক্ষার্থীদের সাথে এক ধরনের টোপ মাত্র। এই টোপের মাধ্যমে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি বিনিময়ে এনবিআর-এ চাকরি দেয়া হয়। এর সাথে উধ্বর্তন অনেক কর্মকর্তার যোগসাজস রয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ উঠেছে, এই অসাধু দুর্নীতিবাজ কর্মচারীরা এআরও পদে পদোন্নতি পেয়ে তারা দুর্নীতির ট্রেনিং সেন্টার খুলে বসবে। তবে তাদের শেল্টার দাতা হিসেবে তাদের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা দায়ী।

আরেক সাব-ইন্সপেক্টর আবুল খায়ের ভূইয়া সদ্য  তাকে মতিঝিল বিভাগ হইতে বদলী করা হয়েছে মুন্সীগঞ্জ বিভাগে। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দল হামিদ খানের এলাকা থানেশ্বর,ইটনার বাসিন্দা হবার সুবাধে মহা দাপট খাটিয়েছেন। তিনি ঢাকার উপকন্ঠে তুষার ধারা ‍আবাসিক এলাকায় নিজস্ব আলিশান  ফ্লাট ও স্ত্রী ফারজানা আক্তারের নামে যৌথ মালিকানায় প্রায় ৫ কোটি টাকা মুল্যের জমির শেয়ার কিনেছেন। যেখানে ১১ তলা বিশিষ্ট তিলোত্তমা টাওয়ার গড়ে তোলার কাজ প্রক্রিয়াধীন। উক্ত টাওয়ার নির্মানে শেয়ার তার আরও কোটি টাকার অধিক টাকা ব্যয় হবে। আবুল খায়ের ভূঁইয়ার সাথে  গোয়েন্দা শাখার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুনের সম্পর্ক ছিলো গভীর। তার অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে গেলে গোয়েন্দা পুলিশ দিয়ে হয়রানী করা হতো বলে একজন ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা ডায়রির এই প্রতিবেদককেও তিনি গোয়েন্দা পুলিশের ভয় দেখান।

সঞ্জিব বিশ্বাস কম্পিউটার অপারেটর কাম সাঁট মুদ্রাক্ষরিক। ভ্যাট কমিশনারেট (পশ্চিম) এর কার্যালয়ে ২০১৬ সাল থেকে কর্মরত আছেন । দীর্ঘ সময়কাল একই অফিসে কর্মরত থাকার কারনে তিনি  নিজস্ব একটি বলয় গড়ে তুলেছেন। নিয়োগ বদলী সহ ফাইল প্রসেসিং সকল কিছুতেই রয়েছে তার প্রভাব। গ্রামের বাড়ী টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে। ঘাটাইলে মন্ডিরের পাশে কিনেছেন কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। মিরপুরে একই বিল্ডিংয়ে আলিশান দুটি ফ্লাট। ৮৫৫,মনিপুর স্কুলের পাশে মোহনা টাওয়ারের ৫/১.৫/২ দুটি ফ্লাটেই তিনি স্ব-পরিবারে বাসবাস করেন। ব্যবহার করেন (ঢাকা মেট্রো-চ-১৯-০৯৯০) এক্স নোহা গাড়ী। একজন কম্পিউটার অপারেটর মাত্র ৮ বছর চাকুরী জীবনে মিরপুরের মনিপুরে দুটি ফ্লাটের মালিক হয়েছেন।  বিজ্ঞ মহলের প্রশ্ন ৮ বছরের চাকুরী জীবনে ব্যবহারের জন্য ত্রিশ লাখ টাকা মূল্যের নোহা গাড়ী বেতনের টাকায় সম্ভব হয়নি। এরা রাজস্ব আদায়ের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। শুধু একটি গাড়ি বাবদ মাসিক ড্রাইভারের বিশ হাজার টাকা বেতন সহ তেল ও অন্যান্য খরচ পড়ে  ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।

দুর্নীতি পরায়ন কর্মচারীও রয়েছেন পদোন্নতির তালিকায়। সূত্রমতে, এদের বিরূদ্ধে বিভাগীয় কঠোর নীতিমালা তৈরী করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। পদোন্নতির তালিকায় যে সকল তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী রয়েছে তাদের সম্পদের হিসাব নেই সংস্থাটির কাছে। প্রত্যেক কর্মচারীর সম্পদের বিবরনী বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছেন বিজ্ঞমহল।

বাণিজ্য

আরও পড়ুন