• ঢাকা
  • শনিবার , ১৬ আগস্ট ২০২৫ , ভোর ০৪:৫৮
ব্রেকিং নিউজ
হোম / ক্রাইম
রিপোর্টার : মোঃ মাহবুবুর রহমান:
কে এই মানব পাচারকারী ফখরুল!

কে এই মানব পাচারকারী ফখরুল!

প্রিন্ট ভিউ

# দুবাইতে কাল তালিকাভুক্ত 

# অর্থ ও মানব পাচারের মাফিয়া 

সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রমিক প্রেরণে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও দূতাবাসের সত্যায়ণকৃত ডিমান্ড নোটের অপব্যবহার করায় এক বছরের জন্য কালোতালিকাভুক্ত করা হয়েছে জনশক্তি রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান হিউ্যোন রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টারকে। প্রতিষ্ঠানটির সত্ত্বাধিকারি মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানীতে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার করেছেন। নিজের মেডিকেল সেন্টারে প্রায় ৭০ হাজার কর্মীর মেডিকেল চেকআপ করে হাতিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। সম্প্রতি রাজধানীর পল্টন থানায় তার বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছেন অপর একজন ব্যবসায়ী। 

জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের এআএল-৪৫২। বারিধারা জে ব্লকের ৮ নম্বর সড়কের ১০ বাড়িতে থাকা এই পতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ফ্যাসিবাদী সরকারের একজন দোসর। তিনিসহ আরও কয়েকজন ছাত্র-জনতার গণঅভূত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করতে ও দেশের জনশক্তি রপ্তানীখাতকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করে আসছেন। তার ধারা বাহিকতায় ফখরুল ইসলাম গত ৬ নভেম্বর মালশিয়ান তিন জন ব্যক্তিকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তাদের তিন জনই জনশক্তি আমদানী রপ্তানী ব্যবসায় জড়িত। তারা হলেন, মালেশিয়ান বেসরকারী সংস্থা মালেশিয়া ইন্টারন্যাশনাল সিকউরিটি অর্গানাইজেশন ফর ফরেন ন্যাশনাল নামক সংগঠনের সভাপতি দাতোশ্রী থাইয়াগরাজ ও সাধারণ সম্পাদক ড. সুকামারানা এনকে নায়ার এবং সেখানকার ব্যবসায়ী দাতো মো: নোয়া। গোপনে  বাংলাদেশে আনেন। তাদেরকে গোপনে মালেশিয়ান সরকারী প্রতিনিধি সাজিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তিগণকে সরকারী সংস্থার কর্মকর্তা পরিচয় দেন। বাংলাদেশে দূতাবাসের কোন অনুমতি ছাড়া বাংলাদেশে এসে অনাধিকার চর্চার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানী কারকদের বিষয়ে অবৈধভাবে খোঁজ খবর নেন। ওই ব্যক্তিরা ফখরুল ইসরামের সহযোগিতায় নিজেরদেরকে মালেশিয়ান সরকারে প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ থেকে মালেশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানীকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য নানান অপতৎপরতা চালান। বাদী মালেশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানীকারক হিসাবে এবং বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এবং বাংলাদেশ ও মালেশিয়ান দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ওই ব্যক্তিদেরকে ভূয়া পরিচয় নিশ্চিত হন। বাদী আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে মালেশিয়া শ্রম বাজারকে বাধাগ্রস্ত এবং বর্তমান অন্তবর্তীকালিন সরকারকে বৈদেশিক শ্রম বাজারে অস্থিরতায় ফেলতে ফ্যাসিবাদি স্বৈরাচার সরকারের দোসর ফখরুল ইসলাম  ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) ফখরুলকে সিন্ডিকেটের সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করে একটি অভিযোগ জমা হয়েছে। ওই অভিযোগে বলা হয়, পতিত শেখ হাসিনার সরকারের আমলে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগ বাণিজ্যে ১০ সিন্ডিকেটের সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী ছিলেন ফকরুল ইসলাম। মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাণিজ্যের জন্য বাগিয়ে নিয়েছেন নিজের মেডিক্যাল সেন্টার ওয়েলকাম মেডিক্যাল। প্রায় ৭০ হাজার কর্মীর নামমাত্র স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার মাধ্যমে  হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। পরে তিনি পরিচয় লুকিয়ে নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমাণের চেষ্টা করছেন। তার কমপক্ষে দুইটি লাইসেন্স রয়েছে ১০১ রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকায়। সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকাতেও রয়েছে তার এজেন্সি ও ওয়েলকাম মেডিক্যাল সেন্টার। 

১০১ সিন্ডিকেটভুক্ত ফখরুল ইসলামের বেনামী প্রতিষ্ঠান ছিল ত্রিবেনি ইন্টারন্যাশনাল ও সেলিব্রেটি ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিষ্ঠান দুটির মালিকানায় অন্য ব্যক্তির নাম থাকলেও যার নেপথ্য মালিক ও অংশীদার ফখরুল ইসলাম। তিনি নিজের লাইসেন্স সরাসরি ব্যবহার না করে অন্যের নামে ব্যবসা করছেন। অন্য যারা ব্যবসা করেন তাদের লাইসেন্স ছিল একটি। আর ফখরুল ব্যবসা করেছেন দুই লাইসেন্সে। তাছাড়া অন্য ব্যবসায়ীরা মূল ১০১ এজেন্সির মধ্যে অথবা সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে ছিলেন। আবার অনেকে ছিলোন শুধু মেডিক্যাল সেন্টার ব্যবসায়। কিন্তু ফখরুলই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সব জায়গায় আছেন এবং দেদারছে ব্যবসা করেছেন। 

ব্যবসায়ীদের দাবী ফকরুল কথা দিয়ে কথা রাখে না। তার কথাবার্তা ও আচার আচরণ একজন প্রকৃত ব্যবসায়ীর পর্যায়ে পড়ে না । তিনি নিজেও মালয়েশিয়া থেকে উচ্চমূল্যে পাঁচ থেকে ছয় হাজার ভিসা ট্রেডিং করেছেন। যার মাধ্যমে তিনি বিপুল অর্থ পাচার করেছেন। ফখরুল বহুল আলোচিত ১০ সিন্ডিকেটের সময় ১৮ হাজার ও গত ২০২৩-২৪ সালে ৬ হাজার লোক পাঠান। এসব লোকের কাছ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা করে নিয়েছে তার প্রতিষ্ঠান হিউম্যান রিসোর্স লিমিটেড। শ্রমিকরা নিজেই এ সংক্রান্ত স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেছেন তারা মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য  সাড়ে ছয় লাখ টাকা করে ফখরুলকে দিয়েছেন। 

গত ৩১মে শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার পর ফখরুল ইসলামসহ কয়েকজন মিলে ভিন্ন কৌশলে সিন্ডিকেট করার চেষ্টা করেন। মালয়েশিয়ার ক্ষমতাশীল একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতাধর কতিপয় নেতার সঙ্গে তাদের কয়েকজনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়া ভাইরাল হয়েছে। মালয়েশিয়ার একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে মোটা অংকের অর্থ স্পন্সর করার সূত্রে দাওয়াত পান ফখরুল ও তার সহযোগীরা। শুধু তাই নয়, দেখা করেছিলেন মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। সেখানকার কর্মকর্তারা তার প্রস্তাব নাকচ করে দেয়ায় দেশে ফিরে নিজেকে বঞ্চিত দাবী করে শুরু করেছেন নানা অপতৎপরতা।

জনশক্তি রপ্তানি সংশ্লিষ্ট একজন ব্যবসায়ী জানান, ফখরুল এখন বায়রার সভাপতি হওয়ার জন্য বিভিন্ন মহলের অনুকম্পা পেতে সিন্ডিকেট বিরোধী কথা বলছেন। অথচ তিনি সব সময়ই সিন্ডিকেটের অংশ ছিলেন এবং নিজেও সিন্ডিকেট করেছেন। ফখরুলের বিরুদ্ধে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অভিযোগ, তিনি বিভিন্ন টকশো, সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে ভুল এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে শ্রমবাজারকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। তার বক্তব্যগুলো তার অনুসারীরা মালয়েশিয়াতে ছড়িয়ে দেয়ায় সম্ভাব্য নিয়োগকর্তারা বাংলাদেশী শ্রমিক বিমুখ হচ্ছেন।

ফকরুলের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মালয়েশিয়া গিয়ে প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা জানান, সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাতকারে ফখরুল ইসলাম স্ববিরোধী বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় ১৫টি সোর্স কান্ট্রি থেকে শ্রমিক নেয়। মালয়েশিয়ার সরকার এজেন্সি মালয়েশিয়ার সরকার সিলেকশন করে দিবে। যা করা হয় ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (এফডব্লিউসিএমএস) মাধ্যমে। তার দাবী এফডব্লিউসিএমএস বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশে কার্যকর করতে পারেননি। সংশ্ষ্টিরা বলছেন বিষয়টি মিথ্যাচার। এফডব্লিউসিএমএস মালয়েশিয়ার জনশক্তি আমাদানী বিষয়ক সফটওয়্যার। সব সোর্স কান্ট্রি থেকে একই নিয়ে তারা শ্রমিক নিয়ে থাকেন। ফখরুলের দাবী এফডব্লিউসিএমএস দুই দেশের সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছে। যা নিলর্জ মিথ্যাচার। ফখরুল বলেন, অনেকে ভিসা নিয়ে এসেছেন, আমি নিজেও ভিসা এনেছি। সেটা অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে পাঠাতে হয়েছে। 

দুদকের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ফেনী থেকে ঢাকায় এসে ছিলেন লজিং মাস্টার।  পরে শুরু করেন পাসপোর্টের দালালি।  পাসপোর্ট এর দালালি করায় কয়েক দফা পুলিশ হাতের গ্রেফতার হন। জনশক্তি রপ্তানী খাতে নানা অনিয়ম ও জালিয়াতের মাধ্যমে  মোহাম্মদ ফখরুল বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। বারিধারা জে ব্লকের ৮ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর প্লটে করেছেন ১০ তলা ভবন। এই ভবনে তার হিউম্যান রিসোর্স ও ওয়েলকাম মেডিকেল সেন্টারের কার্যালয়। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় করেছেন বাড়ি। নামে বেনামে রয়েছে একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাট। ব্যাংকের রয়েছে বিপুল পরিমান স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি। গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার দাগনভূঁঞার ওমরপুরে বিপুল পরিমান ফসলী জমি ক্রয় করেছেন তিনি।

ক্রাইম

আরও পড়ুন